আজকাল একটা ক্রেডিট কার্ড সাথে না থাকলে বন্ধু সমাজে যেন মুখ দেখানোই মুস্কিল। স্মারটনেস যেন এই প্লাস্টিক কার্ডেই সীমাবদ্ধ। আর বন্ধুমহলে গর্বের আর গল্পের বিষয় হল কার কয়টি  ক্রেডিট কার্ড আছে। কিন্তু আপনি কি কখনও ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা-অসুবিধা কিংবা এর সঠিক ব্যবহার বিধি নিয়ে ভেবেছেন? আসুন আজকের ব্লগে আমরা জেনে নেই কিভাবে আপনি একটি ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন আর এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো কি কি।

ক্রেডিট কার্ড কি?

ক্রেডিট কার্ড একটি প্লাস্টিক কার্ড যার মাধ্যমে আপনার ব্যাংক আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অংকের টাকা খরচের অনুমতি দেয় কিছু নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। ক্রেডিট কার্ডের কিছু আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ড বা মেডিয়া রয়েছে যেমন- ভিসা, মাস্টার কার্ড, এমেক্স, নেক্সাস ইত্যাদি। এছাড়া আপনাকে ব্যাংক খরচের যে লিমিট দেয় তার উপর ভিত্তি করে কতগুলো ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। যেমন- সিলভার, গোল্ড, প্লাটিনাম ইত্যাদি। সাধারনত ১ লাখ টাকার নিচে লিমিট হলে সিল্ভার, ২ লাখ টাকার নিচে হলে গোল্ড আর ২ লাখের উপর লিমিট হলে প্লাটিনাম কার্ড বলা হয়।

বাংলাদেশের সব প্রাইভেট ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে থাকে। কেও ভিসা, কেও মাস্টার কার্ড আবার কেও কেও ভিসা ও মাস্টার কার্ড এর সেবা প্রদান করে। তবে সব ব্যাংকই বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুসরন করে চলে।

কিভাবে ক্রেডিট কার্ড পেতে পারেন?

আপনি যদি একজন চাকুরে হয়ে থাকেন তাহলে ক্রেডিট কার্ড পেতে চাইলে আপনার যা যা লাগবে তা হল- পাসপোর্ট সাইজ ছবি, এন আই ডি এর কপি, যে ব্যাংক এ আপনার স্যালারি হয় তার স্টেটমেন্ট (৬ মাসের), টিন সার্টিফিকেটের কপি আর ঠিকানা প্রমানের জন্য বাসার ইউটিলিটি বিলের কপি। আর ব্যবসায়ি হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি দিতে হতে পারে।ক্রেডিট কার্ডের লিমিট হতে পারে আপনার স্যালারির ২-৫ গুন পর্যন্ত।

এছাড়া অনেক ব্যাংক এফ ডি আরের বিপক্ষেও ক্রেডিট কার্ড দেয়। সেক্ষেত্রে ঐ ব্যাংকে আপনার ফিক্সড ডিপোজিট থাকতে হবে।

এই ডকুমেন্টগুলো আর সাথে ব্যাংকের ফর্ম পূরন করে জমা দেবার ৫-৭ দিনের মধ্যে আপনি ক্রেডিট কার্ড হাতে পেয়ে যাবেন।

বছরে আপনাকে কত চার্জ দিতেহবে?

একটি ক্রেডিট কার্ড সাথে রাখতে হলে কার্ড ভেদে আপনাকে ১৫০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা বাৎসরিক ফি দিতে হবে। তবে অনেক ব্যাংক নির্দিষ্ট সংখ্যক ট্রানজ্যাকশন করার মাধ্যমে এই ফি মৌকুফ করে দেয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে কোন বাৎসরিক ফি দিতে হবে না।

ডুয়েল কারেন্সি ক্রেডিট কার্ড কি?

এই কার্ডে দুইটি পার্ট থাকে, লোকাল কারেন্সি পার্ট আর ডলার কারেন্সি পার্ট। লোকাল পার্ট দিয়ে আপনি লোকাল মানে দেশের মধ্যে ট্রানজ্যাকশন করতে পারবেন আর ডলার কারেন্সি পার্ট দিয়ে আপনি ডলারে ট্রানজ্যাকশন করতে পারবেন। তবে দেশের বাইরে যাবার আগে আপনাকে ডলার এন্ডোরস করে নিতে হবে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের যত সুবিধা

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের সুবিধাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল আপনার কাছে ক্যাশ টাকা না থাকলেও আপনি খরচ করতে পারবেন। বেশিরভাগ ব্যাংকই আপনার বিলিং ডেট থেকে ১৫ দিন সময় দিয়ে থাকে টাকা শোধ করার। এর মাঝে টাকা পরিশোধ করে দিলে আপনাকে কোন সুদ দিতে হবেনা। এছাড়া নির্দিষ্ট আউটলেটে ক্রেডিট কার্ড আপনাকে ৫%-২০% ছাড় দিতে পারে, কোন ডকুমেন্ট ছাড়াই আপনি নির্দিষ্ট পন্য কিস্তিতে নিতে পারবেন, এজন্য আপনাকে কোন অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে না।

এছাড়া অনলাইনে কেনাকাটা, ইউটিলিটি বিল সহ অন্যান্য বিল প্রদানের সুবিধাও রয়েছে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য। তাই বলা যায় ক্রেডিট কার্ড বিপদের দিনের বন্ধুর মতই কাজ করবে।

ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের অসুবিধা

সময় মত টাকা পরিশোধ না করতে পারলে ক্রেডিট কার্ড আপনার জন্য গলার কাঁটা হয়ে উঠতে পারে। এমনকি মরন ফাঁদও বলতে পারেন। কেননা এর সুদের হার অনেক বেশি। মাসে কম করে হলেও ২৭%। শুধু তাই না, এটি চক্রবৃদ্ধিহারে বাড়তেই থাকবে। যতদিন না শোধ করবেন।

এছাড়া, ক্রেডিট কার্ড হাতে থাকলে খরচের মাত্রা নিয়ন্ত্রন না করতে পারলে ধীরে ধীরে ক্রেডিট কার্ড আপনার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিতে পারে।

পরিশেষে বলতে চাই, সঠিক নিয়ম মেনে ব্যবহার করলে ক্রেডিট কার্ড আপনাকে যেমন কিছু স্বাচ্ছন্দ এনে দেবে তেমনি এর অপরিমিত ব্যবহার আপনার জীবনে বয়ে আনতে পারে বিশাল ঋণের বোঝা। তাই বুঝে শুনে ক্রেডিট কার্ড নিন এবং এর সঠিক ব্যবহার করুন।

Content Credit: রেডিটুরিডিং.কম


2 تعليقات

إرسال تعليق

أحدث أقدم